এমরান হোসেন বাপ্পি : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপি’র ২টি পৃথক গ্রুপে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। আগেরদিন মঙ্গলবার বিকেল হইতে সাবেক উপজেলা সভাপতি তাহের পলাশী গ্রুপ চৌদ্দগ্রাম বাজারস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও বর্তমান সভাপতি কামরুল হুদা গ্রুপের নেতাকর্মীরা বাজার সংলগ্ন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদের সামনে স্থান দেখিয়ে পৃথক পৃথক ব্যানারে প্রচারণা চালায়। পৃথক প্রচারণায় মিটিংয়ের আগেরদিন হইতেই দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার দুপুর হইতে কামরুল হুদার লোকজন কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জড়ো হতে থাকে। অপরদিকে তাহের পলাশীর লোকজন দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হলে এ নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। তাৎক্ষনিক কেন্দ্রীয় বিএনপি’র হস্তক্ষেপে তাহের পলাশী গ্রুপ পরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জড়ো হন।
এসময় উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি কামরুল হুদার নেতৃত্বে স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা ঈদগাহ মাঠ মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। বিকাল ৩টা সময় নির্ধারণ করা হলেও সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, প্রধান বক্তা সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানাসহ অতিথিবৃন্দ ৪টা ১৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌছে। এসময় নেতাকর্মীরা কামরুল হুদার নামে ব্যাপক স্লোগান ও সেলপি তোলার হিড়িক শুরু করে। কোন ভাবেই অতিথিদের সামনে থেকে কর্মীদের সরানো যাচ্ছিলো না। ছোট্ট পিকআপে অবস্থানকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতেই বেশ কয়েক দফায় ধাক্কাধাক্কি হয় নেতাকর্মীদের মাঝে। বিপত্তি বাঁধে, কে কার আগে পিকআপে উঠবে ফলে নেতাকর্মীদের কারণে অতিথিবৃন্দ পিকআপে উঠার কোন সুযোগই পাচ্ছিলোনা। সমাবেশের প্রধান অতিথি মোস্তাক মিয়া মাইক্রোফোন হাতে নেতাকর্মীদের পিকআপ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। পরে মোস্তাক মিয়া বেশ কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়ে পিকআপ থেকে নিচে নামাতে দেখা যায়। একপর্যায়ে অতিথিসহ কয়েকজন নেতাকর্মী জুতা পায়ে মসজিদের ভিতর ডুকে পড়ে। পরবর্তীতে পিকআপটি মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে নিয়ে আসা হয়। এরই মধ্যে আসরের আজানের সময় হলে চরম হট্টগোলের মধ্যেই আজান দেওয়া হয়। ৪.৫০ মিনিটে সমাবেশের কার্যক্রম কোরআন তেলোয়াত ছাড়াই শুরু হয়ে যায়। জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ছুট্টুর বক্তব্য চলাকালে নামাজের জন্য মাত্র ৫ মিনিট বিরতির কথা বলে বক্তব্য বন্ধ রাখতে বললেও কোনভাবেই তাদের হট্টগোল থামানো যাচ্ছেনা। বেশ কয়েকটি মাইক্রোফোন থাকায় ঐ সময় সংশ্লিষ্ট বক্তা বক্তব্য বন্ধ রাখলেও অপর নেতারা স্লোগান এবং হট্টগোল চালিয়ে যায়। মসজিদের প্রবেশ পথ বন্ধ থাকায় অনেক মোসল্লি মসজিদে প্রবেশ করতে পারেনি। কিছু মুসল্লি প্রবেশ করলেও তাদের নামাজ আদায় করতে চরম বেগ পেতে হয়েছিল।
মসজিদের প্রধান ফটক বন্ধ করে নামাজের বিরতি না দিয়ে সমাবেশ করায় সামাজিক যোগাযোগে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। চলছে পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কমেন্ট ও রিপ্লাই কমেন্টস।
এই বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম জানান, বিএনপির এই প্রোগ্রামের বিষয়ে কোন কিছুই জানা ছিল না। নারী-পুরুষ এভাবে মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশ করবে তা কোন ভাবেই সমর্থন করিনা। আমি এখানে রাজনীতিক হিংসা থেকেও বলছিনা, বা কোন ক্ষোভেও বলছিনা। তাদের এই অগোচালো সমাবেশের কারণে মসজিদে আসরের নামাজটা ঠিক ভাবে আদায় করা যায়নি। আমি এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মজুমদারকেও বলেছি এটা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। তোমরা যদি ঈদগাহ কমিটিকে জানিয়ে সমাবেশ করতা আমরা সুন্দর করার জন্য সহযোগীতা করতাম।
এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সভাপতি জিএম তাহের পলাশী বলেন, আমি সমাবেশের জন্য আলাদা ভেনু করেছিলাম, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্যাহ বুলু ভাই একসাথে প্রোগ্রাম করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু কামরুল হুদা তাতে কোন কর্ণপাত করেনি। আমি আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে অতিথিদের সাথে সমাবেশস্থলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অতিথিরা গাড়ি থেকে না নেমেই চলে যায়। পরক্ষনে আমরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে গেলে নারী-পুরুষ অতিথিরা মসজিদের ভিতরে ডুকে গেইট লাগিয়ে দেয়। তারা হয়তো ভেবেছিল আমরা কোন ঝামেলা করবো। নামাজের সময় বিরতি ও মসজিদের প্রধান ফটকে সমাবেশ করার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা খুব অন্যায় হয়েছে। সমাবেশের অতিথিদের অবস্থানটা উত্তর-দক্ষিন ও পূর্ব দিকেও করতে পারতো। কিন্তু তা না করে মসজিদের ফটকের সামনে করা উচিত হয়নি। এটার জন্য তারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জবাবদেহি করতে হবে। এছাড়াও নামাজের সময়েও কামরুল হুদার নামে স্লোগান বন্ধ করা যায়নি, আমি মনে করি পূর্ব থেকে নির্দেশনা ছিল শুধু তার নামে স্লোগান হবে। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।