২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র, ১৪৩০
শিরোনাম :
ঢাকাস্থ গুনবতী ফাউন্ডেশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত চৌদ্দগ্রামে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতার প্রয়াত ও প্রবীণ নেতাদের পাশে চৌদ্দগ্রাম জাতীয় পার্টি’র নেতৃবৃন্দ চৌদ্দগ্রামে শর্ট বাউন্ডারী টিভি কাপ টুর্ণামেন্টের পুরস্কার বিতরণ চৌদ্দগ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহমেদের মৃত্যু আটাব নির্বাচনে বিজয়ী খোরশেদ আলমকে সংবর্ধনা চৌদ্দগ্রামে স্মার্টফোনের সহায়তায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষকসহ আটক-২ চৌদ্দগ্রামে জাতীয় পার্টির উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী বিতরণ পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত করলেন জার্মান আ’লীগ নেতা সাইফুদ্দিন আলমগীর ড. কামাল চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানালো চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দ

পতাকার রঙে রঙিন ধোড়করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিক্ষার মান ও ফলাফলে এসেছে পরিবর্তন

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ৮৬নং ধোড়করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সাজানো হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রঙে। বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বর্ধনে একটি পাকা ও একটি সেমি-পাকা ভবনে দেয়া হয়েছে এ রঙ। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস ও ফুলের বাগানের মাঝে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক পলকেই সকলের নজর কেড়ে নেবে। ধোড়করা বাজারের পাশ ঘেষে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে দৃষ্টি নন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা ফলাফলে সাড়া জাগানো প্রতিষ্ঠানটি যেন একটি ফুলের বাগান। বৃক্ষের ছায়া ঘেরা মায়া জড়ানো প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছে শান্তির নীড়।

জাতীয় পতাকার সাজে চোখ জুড়ানো মন ভোলানো প্রতিষ্ঠানের রঙিন অবয়ব উপজেলা জুড়ে লাগিয়ে দিয়েছে তাক। তাই প্রতিষ্ঠানের পাশ দিয়ে চলতে গিয়ে চোখ ধাধাঁনো দৃশ্য দৃষ্টি গোচর হলে চোখ ফেরানো দায়। ফলে আনন্দে আত্মহারায় পাঠ গ্রহণকারী শিশুরা হয়ে উঠেন বাগানে বিচরণ করা অপরূপ সৌন্দর্য্য মাখা পরীর রূপে। হইহুল্লোড় বিহীন অত্যন্ত মনোরম ও নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার মান ও প্রাথমিক সমাপনী ফলাফলে এসেছে পজেটিভ পরিবর্তন। উপজেলার অন্যসব প্রতিষ্ঠানের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: গোলাম হায়দার সহ শিক্ষকবৃন্দ আধুনিক পদ্ধতিতে মানসম্মত পাঠদানে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ২০১৯ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৩টি এ প্লাস সহ শতভাগ পাশের সাফল্য অর্জনে স্থানীয়রা প্রশংসা করেছেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এ বিদ্যালয়ের রয়েছে সু-বিশাল মাঠ, ২টি একাডেমিক ভবন, সু-সজ্জিত ও পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ, সু-পরিকল্পিত ৩টি ফুলের বাগান, ৬টি পরিচ্ছন্ন-জীবানুমুক্ত বাথরুম সমৃদ্ধ মানসম্মত ওয়াশ বøক, করোনাকালীন সময়ের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আলাদা হ্যান্ড ওয়াশ বøক, শেণিকক্ষ পরিস্কার রাখার নিমিত্তে শ্রেণিকক্ষে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক ডাস্টবিন, শেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য রয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। প্রায় শতভাগ আধুনিক এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে লেপটপ ও প্রজেক্টর সমৃদ্ধ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ইন্টারনেট সংযোগ, নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে একদল দক্ষ, সৎ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী। যারা সৃজনশীল ও আধুনিক পদ্ধতিতে মানসম্মত পাঠদানের মাধ্যমে ধারাবাহিক সাফল্যে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। নিয়মিত মা সমাবেশ ও উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে অভিভাকদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে তাদেরকে সচেতন করা বিদ্যালয়ের একটি মহৎ গুণ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ সকলের সমন্বয়ে বিদ্যালয়কে ঘিরে যে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা উপজেলায় বিরল। এর ফলে সম্ভব হচ্ছে শতভাগ উপস্থিতি নিয়ে পাঠদান, মূল্যায়ন এবং এমনকি আন্তঃস্কুল, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে স্বপ্ন বিনির্মাণ। বর্তমানে এখানে চলছে টেকশই শিক্ষা প্রদানের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা। উন্নত ও বাস্তবসম্মত শিক্ষার জন্য চলছে প্রশিক্ষণ ও বিশ্লেষণ। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ১৭৪ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। পড়ালেখায় আরো বেশি মনোযোগি করতে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতি বছর সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যের বইয়ের সাথে স্কুল ব্যাগ ও স্কুল ড্রেস বিতরণ করা হয়।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো: গোলাম হায়দার মামুন বলেন, সুশৃঙ্খল ও মনোরম পরিবেশে উন্নত ও পরিশীলিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে একটি মডেল বিদ্যালয়ে পরিণত করার জন্য আমরা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, সাংবিধানিক অঙ্গীকার, শিক্ষা কারিকুলাম, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিদ্যালয়ের কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করছি। আধুনিক শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার প্রতিযোগীতায় সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় চলছে চরম প্রতিযোগীতা। তাই নানা রঙে-নানা সাজে শিক্ষার প্রতি শিশুদের মানোযোগ বাড়াতে নেয়া হয়েছে ভিন্নধর্মী নানা উদ্যোগ। গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নেয়া হয়েছে নানা মহতি উদ্যোগ। নজর কাঁড়া সকল প্রকার সহযোগীতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। যার ফলে মেধা ও বিচক্ষনতা দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা দৃষ্টি নন্দন প্রতিষ্ঠানটি নজর কেড়েছে সকলের। প্রত্যাশা করছি অতি দ্রুতই “ধোড়করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” হবে উপজেলা ও জেলার সীমানা ছাড়িয়ে দেশের মডেল বিদ্যালয়।

উপজেলার ১৭৫ টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরিবেশ ও মানগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সামনের সারিতেই রয়েছে ধোড়করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় শ্রেণি কক্ষের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় পাঠদানে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। এরপরও শিক্ষার গুনগত মান ঠিক রেখে প্রতিষ্ঠানের সম্মান অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: গোলাম হায়দার মামুন।

তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার মানদন্ড ঠিক রাখতে সব সময় হাতে নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন কলা-কৌশল। বিনোদনে ও সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফল ভাল রাখতে থাকে বিশেষ ব্যবস্থা। ফলে শতভাগ পাশের সাথে মেধা তালিকায় স্থান অর্জন করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মননশীলতায় বঙ্গবন্ধু কর্ণার, মুক্তিযোদ্ধা কর্নার, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ নামে একটি দেয়ালিকা প্রকাশ, সততা ষ্টোর, শিক্ষা উপকরণ পদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় ওয়াশ বেসিন, চিরুনী, ও নেইল কাটার ও লুকিং গ্লাস কার্যক্রম এর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে নেয়া হয় নানা ব্যতিক্রমী কর্মসূচি। এসময় তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে স্থানীয়দের ধন্যবাদ জানান।

সুন্দর আনন্দঘন পরিবেশে টিফিন বিরতির সময় দৌড়াদৌড়ি আর খেলাধুলায় মত্ত থাকলেও ক্লান্তি আসবে না শিশুদের। আলো বাতাস বেষ্টিত পরিবেশে পাঠদানের উপযোগী শেণি কক্ষগুলোতে মনোযোগী থাকে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিনোদনমুলক পরিবেশে ঘুরতে এসে অভিবাবকদের উৎফুল্ল হয়ে উঠে মন। যে কারণে শিক্ষালয়টি শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রে রূপ নেয়ায় লেখাপড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদেরও মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান সচেতন অভিভাবকরা।

এবিষয়ে বিদ্যালয়ের জমিনদাতা ও সাবেক সভাপতি এডভোকেট আমিনুর রহমান এর সুযোগ্য পুত্র বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি এডভোকেট আসফিকুর রহমান বলেন, সাবেক রেলপথমন্ত্রী মো: মুজিবুল হকের এমপি’র সার্বিক তত্বাবধানে ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে উপজেলা ব্যাপী হয়ে উঠেছে পরিবেশ ও মানগত শিক্ষার উদাহারণ। এই পন্থায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অনুকরণ করলে দেশব্যাপী আধুনিক শিক্ষার রোল মডেল হবে চৌদ্দগ্রাম। অপর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষের কথা মাথায় রেখে এলাকাবাসীর যৌক্তিক দাবি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংসদ মো: মুজিবুল হক মুজিব এমপি একটি নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ করেছেন। শীঘ্রই নতুন বহুতল ভবনের কাজ শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সচেতন অভিববাকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে পারবে। আমি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

আলোকিত চৌদ্দগ্রাম পরিবার

মো. এমরান হোসেন বাপ্পি

নির্বাহী সম্পাদক
মোবাইল: ০১৮১৯ ৯৯৬২৩৮

মো. বেলাল হোসাইন

বার্তা সম্পাদক
মোবাইল: ০১৮১৩ ০৬৫৭২৮

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন

প্রধান প্রতিবেদক
মোবাইল: ০১৮১৯ ৭৮৬০১২